বন্যায় এলাকার একটা বাঁধ ভেঙ্গে মানুষের চলাচলে কষ্ট হচ্ছে। সরকার কবে মেরামত করবে তা বলা যাচ্ছেনা । সামনে বৃষ্টি শুরু হলে মানুষের দুর্ভোগের সীমা থাকবে না। মি. আলম এলাকার হৃদয়বান মানুষ । তিনি এ সমস্যা নিয়ে গণ্যমান্য অনেকের সাথে কথা বললেন। ছাত্র, যুবক ও সাধারণ মানষের সাথে কথা বলে বাঁধটা নিজেরা সবাই মিলে মেরামত করা যায় কি না সে বিষয়ে উদ্বুদ্ধ করলেন। এরই এক পর্যায়ে একদিন স্কুল মাঠে একটা সভা হলো। গণ্যমান্য অনেকেই কথা বললেন। ছাত্র ও যুবকদের পক্ষ থেকেও কেউ কেউ উৎসাহব্যঞ্জক বক্তব্য রাখলো । সিদ্ধান্ত হলো যারা পারবে টাকা দেবে এবং ছাত্র ও যুবকরা স্বেচ্ছাশ্রম দিয়ে বাঁধ মেরামত করবে । একদিন সকালে নারী-পুরুষ শিশুসহ সবার উপস্থিতিতে কাজ শুরু হলো । সবার মধ্যে প্রচণ্ড উৎসাহ। শুধু বাঁধ মেরামত হলো না গ্রামের মধ্যে রাস্তায় যেখানে যা সমস্যা ছিল তাও সংস্কার হয়ে গেলো । এক্ষেত্রে মি. আলমের কর্মপ্রচেষ্টা উদ্যোগের একটা উদাহরণ।
কোনো নতুন চিন্তা মাথায় রেখে যখন কোনো ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গ তা বাস্তবায়নের প্রয়াস নেন তাকে উদ্যোগ বলে । উদ্যোগের সাথে নতুন চিন্তা, নতুন কিছু করার বিষয় জড়িত । যা প্রয়োজন অথচ নেই, যা নতুন করে শুরু করলে তা ব্যক্তি বা পরিবারের জন্য, দেশ ও দশের জন্য, ব্যবসায়ের জন্য বা এমন কোনো ক্ষেত্রের জন্য মঙ্গলকর হবে- এমন কিছু করার চেষ্টা-প্রচেষ্টা উদ্যোগ হিসেবে বিবেচিত । উদ্যোগের সাথে ইতিবাচক কিছু করার সম্পর্ক বিদ্যমান । চৌধুরী বাড়ির লোকেরা গ্রামে স্কুল করেছে তাই তালুকদার বাড়ির লোকেরা প্রয়োজন ছাড়াই গ্রামে আরেকটি স্কুল করার প্রয়াস নিয়েছে- এটা উদ্যোগ নয় বরং উদ্যোগকে বাধা দেয়ার অপচেষ্টা মাত্র। তুমি যে কলেজে পড়ছো, খোঁজ নিয়ে দেখো এটার পিছনে কারও না কারও বা অনেকের উদ্যোগ কাজ করেছে । আজ যে বড় ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান দেখছো, মসজিদ, মন্দির, হাসপাতাল, ক্লাব ইত্যাদি দেখছো- তার প্রতিষ্ঠার পিছনেও কারও চিন্তা-ভাবনা, শ্রম ও মেধা অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে নিঃসন্দেহে। তাই উদ্যোক্তার ধারণা ব্যাপক বিস্তৃত। তবে Entrepreneurship ইংরেজি শব্দটি ব্যবসায় উদ্যোগ বা শিল্পোদ্যোগ বুঝাতেই এখন কার্যত ব্যবহৃত হয়।
উদ্যোগের সাথে চিন্তার সফল বাস্তবায়নও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দেখা দেয়। উদ্যোগ যখন ব্যর্থ হয় তখন সাধারণভাবে ঐ উদ্যোগ আর মূল্যায়িত হয় না। তবে অনেক সময় উদ্যোগ সাময়িকভাবে ব্যর্থ হলেও পরবর্তীতে নতুন উপায় বা পদ্ধতির অনুসরণে উদ্যোগ সফল বলে পরিগণিত হয়। সেক্ষেত্রে নতুন ও পুরানো সকল প্রচেষ্টায় উদ্যোগ হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে । মি. আলী গ্রামে একটা কলেজ করার উদ্যোগ নিয়ে জমি দান করলেন, টাকা-পয়সা জোগাড় করে বিল্ডিং তৈরি করলেন। কিন্তু শিক্ষার্থী না পাওয়ায় তা বন্ধ হয়ে গেলো। ঐ গ্রামের বাসিন্দা সদ্য অবসরপ্রাপ্ত একটা স্কুলের প্রধান শিক্ষক মি. ভৌমিক চাইলেন মি. আলীর তৈরি স্থাপনায় স্কুল শুরু করবেন । মি. ভৌমিক এলাকার কিছু উদ্যমী যুবক ও তার পুরনো ছাত্রছাত্রীদের সাথে নিয়ে স্কুল প্রতিষ্ঠার কাজে লেগে পড়লেন । বাড়ি বাড়ি যেয়ে ছাত্রছাত্রী যোগাড় করলেন। এক বছর পরই স্কুলের শিক্ষার্থী বেড়ে গেলো । পাঁচ বছরের মাথায় স্কুলটি উপজেলা পর্যায়ে সুনাম কুড়িয়েছে। আর পাঁচ বছর যেতে না যেতেই স্কুলে একাদশ ও বাদশ শ্রেণির ক্লাস শুরু করা যাবে। এক্ষেত্রে মি. আলী ও মি. ভৌমিকের উদ্যোগকে একত্রেই বিবেচনা করতে হবে।